প্রজাপতির অজানা কথা

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  03:47 PM, 04 December 2018

প্রজাপতি প্রকৃতির এক সুন্দর সৃষ্টি। নান্দনিকতার পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রজাপতির প্রধান কাজ উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্য করা। এর মাধ্যমেই উদ্ভিদ বংশবিস্তার করতে সক্ষম হয়। প্রজাপতির মাধ্যমে সৌরশক্তি উৎপাদন সম্ভব।

প্রচলিত সোলার প্যানেলের চেয়ে প্রজাপতির পাখনায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ১০ গুণ বেশি। ফলে পাখা সৌরশক্তি ধারণ ও তা থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা প্রজাপতির পাখার রঙের বিন্যাসকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্র ও অন্যান্য সৌরশক্তি প্ল্যান্টে ব্যবহারের জন্য কাজ করছেন এবং সফলতা অর্জন করেছেন। আবার প্রজাপতি রফতানি করেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। প্রজাপতি পরিবেশ বিপর্যয়ের যেমন আগাম সংকেত দেয়, তেমনি নিজেও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখে।

প্রজাপতির আচরণ দেখে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জানা যায়। ঔষধি গাছ শনাক্তকরণ ও এর গুণাবলি নিরূপণে প্রজাপতির ভূমিকা অনেক। মানুষের কোনো কিছু দেখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে রং। চোখ দিয়ে দেখার পর মস্তিষ্ক কীভাবে বিশ্লেষণ করে তা আজও অজানা। প্রজাপতির ক্ষেত্রে এ রহস্য ‘বাটারফ্লাই কালার ভিশন’ গবেষণার মাধ্যমে অনেকখানি উন্মোচিত হয়েছে।

মানুষের চোখ তিনটি রং লাল, সবুজ ও নীল শনাক্ত করতে পারে। অন্যদিকে প্রজাপতির ‘ওমাটিডিয়াম’ নামের যৌগিক চোখ ধরতে পারে সাতটি রং। তাই প্রজাপতির দৃষ্টি রহস্য পুরোটা ভেদ করতে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

কারণ প্রজাপতির মস্তিষ্কের লেমিনার মনোপোলার অংশের সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের বাইপোলার সেলের মিল আছে। প্রজাপতি কীভাবে দেখে তা জানা গেলে মানুষের ক্ষেত্রেও তা প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। তখন সহজেই ধরা যাবে চোখের নানা রোগ। জানা যাবে মানুষের কোন রং পছন্দ বা অপছন্দের।

প্রজাপতি শুধু দৃষ্টিনন্দন বা গবেষণার বিষয় নয়, এদের অর্থনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে। প্রজাপতি আমদানি ও রফতানি করে প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করা সম্ভব। বিশ্বে প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের প্রজাপতি কেনাবেচা হয়।

ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রজাপতি রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। তাই দেশে অর্থনীতির চাকা বেগবান করতে বাণিজ্যিকভাবে প্রজাপতির চাষ করা যেতে পারে।

প্রজাপতি দেখতে যেমন সুন্দর, এর জন্মানোর প্রক্রিয়াটিও তেমনি অদ্ভুত। এদের জন্ম ডিম থেকেই হয়; কিন্তু ডিম থেকে সরাসরি প্রজাপতি বের হয় না। প্রথমে শুঁয়োপোকা বা লার্ভা বের হয়, এরপর সেই শুঁয়োপোকা একসময় রূপান্তরিত হয় পিউপাতে এবং তারপর অনিন্দ্য সুন্দর প্রজাপতিতে। মোট চারটি ধাপে প্রজাপতির জীবনচক্র সম্পন্ন হয়। জীবনচক্রের এই নির্দিষ্ট সময় একেক প্রজাতির জন্য একেক রকম। শুঁয়োপোকারা মূলত গাছের পাতা খায়। আর পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি খায় ফুলের মধু। এভাবেই এরা জীবনের পথে এগিয়ে চলে।

পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন- মাটি, পানি, বাতাসদূষণ, বনভূমি উজাড়, বৈরী জলবায়ু ইত্যাদি কারণে প্রজাপতির জীবনচক্র আজ বিপন্ন। তাই সবাইকে প্রজাপতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :