শেষ সময়ে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:59 PM, 03 December 2018

মৌসুম শেষ হলেও বঙ্গোপসাগর ও তার মোহনা সংলগ্ন বিষখালি, বলেশ্বর নদী ও গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ। পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় দামও ক্রেতাদের নাগালে।

উপকূলীয় বরগুনা জেলার পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী, তালতলী, আমতলীসহ দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত দুই ধরনের জেলে। এক ধরনের জেলে নদ-নদীতে মাছ ধরে, আরেক ধরনের জেলেরা ফিশিং ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকার করে। বলেশ্বর বিষখালিসহ উপকূলীয় নদ-নদীর ইলিশকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় লোকাল ইলিশ। যা আকারে বড় হয়, তৈলাক্ত ও সুস্বাদু হয়। আর গভীর সমুদ্রের ইলিশকে বলা হয় ফিশিং ইলিশ, যা আকারে খুব বেশি বড় হয় না।

মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় নদ-নদীতে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেদের অবরোধ পালন ফলপ্রসু হয়েছে। সাগর ও নদীতে ইলিশের পরিমাণ বাড়ছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) পাথরঘাটায় আসছে। অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে ফিরে আসা ইলিশভর্তি ট্রলারগুলো ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে আছে। চলতি বছরে মৌসুমের শুরুতে ইলিশের দেখা না পেলেও এখন কাঙ্খিত রুপালি ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটে উঠেছে জেলে, আড়ৎদার ও মৎস্যজীবিদের মাঝে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটায় এখন জেলে, আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ কেউ সেই প্যাকেট দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। সব মিলিয়ে যেন শেষ সময়ও আনন্দের জোয়ার বইছে। এদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় স্বস্তি ফিরেছে উপকূলীয় জেলে পল্লীগুলোতে।

সোমবার গ্রেড অনুযায়ী মণ প্রতি ইলিশ বিক্রি হয়েছে। ফিশিং ১ম গ্রেট ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা, ২য় গ্রেট ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। লোকাল ১ম গ্রেট ২৪ থেকে ২৬ হাজার টাকায়। ২য় গ্রেট ১৪ থেকে ১৬ হাজার ও কেজির ওপরে ইলিশ ৩০ থেকে ৩৮ হাজার টাকা ধরে কেনাবেচা চলছে। যা কদিন আগের চেয়ে প্রায় মণে ৮-১০ হাজার টাকা কম।

জুয়েল নামের এক পাইকার জানান, ঢাকা, যশোর, মাগুরা, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইলিশ মাছ পাঠান তিনি। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসা মাছ অনেক ভালো এবং এখান থেকে নানান জায়গায় মাছ পাঠানো সহজ। এ বছর পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় সব এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ চালান করতে পারছেন তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞায় সরকারি আইন বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসনের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা বিষয়ক সভা-সভাবেশ করা হয়েছে। এতে করে স্থানীয়দের জেলেদের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা সব ধরনের মাছ শিকার থেকে বিরত ছিলেন। যে কারণে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি সফল।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :