আ’লীগের করা আইনে সুবিধা পেলো জামায়াত

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:33 AM, 17 December 2018

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ডিগবাজির সুযোগ দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করায় নিবন্ধনহীন দলের প্রার্থী ও হঠাৎ দল পরিবর্তনকারীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খুলে যায়। আর এই সুযোগটিই এবার নিয়েছে নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতের প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু জামায়াতের প্রার্থীরাই নয়, অনেক প্রার্থী আছেন, যারা নিজের দল ছেড়ে হঠাৎ অন্য দলের যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।

ইসির যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের আগে একটি আইন ছিল, যেখানে বলা হয়েছে- কোনো দলের প্রার্থী হতে হলে সেই দলের যে কোনো পর্যায়ে কমিটিতে অন্তত তিন বছর সদস্য হিসেবে থাকতে হবে। কিন্তু ২০১৩ সালে আরপিও থেকে সেই বিধানটি তুলে দেওয়া হয়। ফলে ‘ডিগবাজি’ ওয়ালাদের পথ খুলে যায়। অর্থাৎ, প্রার্থী হওয়ার জন্য একটি দলের সদস্যপদে নির্দিষ্ট সময় থাকার আর বাধ্যবাধকতা নেই।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দল জামায়াতের ২২ জন নেতা বিভিন্ন আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। যারা স্বতন্ত্র থেকে না দাঁড়িয়ে বিএনপির প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এছাড়া গোলাম মাওলা রনি, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো লোকও বিএনপি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। রনি বিএনপিতে যোগ দিয়েই ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন। আর মান্না নাগরকি ঐক্যের হলেও দলটির নিবন্ধন নেই। এরা সবাই আরপিও থেকে ওই আইনটি তুলে দেওয়ার ফলে নির্বাচনে দল থেকে প্রার্থী হতে পেরেছেন।

২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর দলীয় প্রার্থী হতে হলে তিন বছর সংশ্লিষ্ট দলের সদস্য পদে থাকার বিধানটি [১২ এর দফা ১ (ঞ)] বিলুপ্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন বিলেরপ্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করে সংসদীয় কমিটি।

এ প্রতিবেদন সংসদে তোলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বী মিয়া।

এই বিধান বাতিল করার কথা গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সে সময় বিএনপি এর বিরোধিতা করে। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর বিএনপি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, বাড়বাড়ি করলে ফল শুভ হবে না। বিশেষ দলকে সুবিধা দিতে আরপিও সংশোধন করতে দেওয়া হবে না।

বিএনপির ওই হুঁশিয়ারির পরও জাতীয় সংসদে ওই বিধানটি বিলুপ্ত করেই আরপিও সংশোধনের বিল পাস হয়। ফলে প্রার্থী হতে তিন বছর দলে থাকার বাধ্যবাধকতা উঠে যায়।

২০১৩ সালের জুলাইয়ে নির্বাচন কমিশন আরপিওর কিছু বিধান সংশোধনের প্রস্তাব পাঠায় সরকারের কাছে। এরপর মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করা হয়। সে সময় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিধানটি বাতিলের বিষয় জুড়ে দেয়।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বাংলানিউজকে বলেন, এটা করা উচিত হয়নি। প্রার্থী হওয়ার জন্য অন্তত ছয় মাস হলেও দলের পদে থাকার বাধ্যবাধকতা আইনে থাকা দরকার ছিল। এতে রাজনীতিতে একটা শৃঙ্খলা থাকতো।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার ৩৯টি নিবন্ধিত দলই ভোটের অংশ নিচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রার্থী রয়েছে ১৮৪৬ জন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৯৬ জন।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :