চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১১০ : দরিদ্রতা নয় লোভই কারণ

বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী পুরাতন ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১১০ নিহত হয়েছে, জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডলী অসীম গতির মুখে মানবজীবন হেরে জ্বলে অঙ্গার হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’র জেফরি গেটেলম্যান ‘বাংলাদেশের আগুনে শতাধিক মৃত্যু : এটা দারিদ্র্যের জন্য না, লোভের জন্য।’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেন।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে যখন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো তখন সংকীর্ণ রাস্তাগুলো মানুষের ভিড়ে আবদ্ধ। বাতাসের গতিতে চোখের নিমিষেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চকবাজারের রাস্তায় প্রাকৃতিক গ্যাসচালিত একটি গাড়ি যাচ্ছিল, পেছনে থাকা গ্যাসভর্তি সিলিন্ডারটা আকস্মিক বিস্ফোরিত হলো। সিলিন্ডারটি বিস্ফোরণের সঙ্গেই গাড়িতে আগুন ধরে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ জানায়।
বিস্ফোরিত গাড়ি থেকে অগ্নিকুণ্ডলী চোখের পলকে জীর্ণ সড়কে থাকা রেস্তোরাঁরগুলোর সিলিন্ডারে আঘাত হানে, এরপর নাটকীয়ভাবে বিস্ফোরিত হতে থাকে এরা। সেই আগুন গিয়ে পাশের একটি ভবনের নিচের তলার প্লাস্টিক কারখানাতে ছড়িয়ে পড়ে। প্লাস্টিক কারখানা থেকে আগুন যায় অবৈধভাবে রাসায়নিক দ্রব্য রাখা ছোট্ট এক দোকানে, আগুনের তীব্রতা এবার কল্পনাতীত হয়ে যায়।
ধ্বংসাত্মক আগুন সর্বশক্তিতে ছুটে যায়, রাস্তার পাশে থাকা দেয়াল, সাইকেল, রিকশা, গাড়ি, মানুষ, তার পথের সব কিছুকে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে চোখের সামনে। বাংলাদেশে সবচেয়ে ঐতিহাসিক এলাকাটিতে অন্তত ১১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, এটি এমন একটি দেশ যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনবসতিপূর্ণ, অনিরাপদ কাঠামোর জন্য শত শত লোক মারা গিয়েছিল এবং যেখানে ভবন নির্মাণে নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুত অভিযান কেবল হ্রাসই পেয়েছে।
চকবাজারের একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মোহাম্মাদ রাকিব ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে বলে, ‘অনেক মানুষ আগুনের হাত থেকে বাঁচতে চেষ্টা করেছিল। আমার চোখের সামনে এক রিকশাচালক অগ্নিকুণ্ডলী থেকে বাঁচতে দৌড় দিয়েও লাভ হয়নি, চোখের সামনে আগুন তাকে জীবিত পুড়িয়ে মারলো। আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম। রেস্তোরাঁ আর সব টাকা ফেলেই আমি দৌড়ে প্রাণ রক্ষা করেছি।’
এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশ বাংলাদেশ, ছোট্ট এই দেশটি অত্যন্ত জনাকীর্ণ। ঢাকার এক স্থপতি নিজামুদ্দিন আহমেদ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে বলেন, ‘এটা দরিদ্রতার জন্যে ঘটেনি, লোভের কারণে এটা ঘটেছে। যেসব লোক এসব আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক দ্রব্যাদি মজুদ করে তারা ধনী, তাদের গাড়ি আছে, সুন্দর বাড়ি আছে এমনকি তাদের সন্তানেরা দেশের বাহিরে পড়াশোনা করে। সরকারি কর্মকর্তাদের উচিত সেসব ব্যবসায়ীদের ঘরে কড়া নেড়ে তাদের এসব ব্যবসা বন্ধ করা, এখান থেকে চলে যেতে বলা উচিত।’
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।