সবার চোখ এখন ৩০ ডিসেম্বরে

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:49 AM, 27 December 2018

আইনে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও নির্বাচনী হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমনকি মাঠপর্যায়ে কঠোর কোনো মনোভাব বা বার্তাও দেওয়া হয়নি। বরং কখনো কখনো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির অসহায়ত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ আছে কি না, সে প্রশ্নেও বিভক্ত ইসি।

* হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না ইসি
* নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়নি
* তবে সিইসির দাবি, সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে
* কমিশনার মাহবুব বলেছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই
* নির্বাচনের আগমুহূর্তে সিইসির সঙ্গে মাহবুবের মতবিরোধ

এখন পর্যন্ত প্রচারে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইসির বড় কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলেও সিইসি কে এম নুরুল হুদা বারবার দাবি করছেন, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছে, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই। গতকাল তিনি হামলা–সংঘাতের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ও মতবিরোধ সঙ্গে নিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে ইসি। বিএনপিসহ বেশ কিছু দলের বর্জনের ফলে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন ছিল অনেকটা একতরফা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার–ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর এবারই প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে।

জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) দেওয়া ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন কোনো প্রার্থীর বিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর বেআইনি কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে।

নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রতিপক্ষের সভা, শোভাযাত্রা ও প্রচারাভিযানে বাধা দেওয়া যাবে না। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে।

কেউ নির্বাচন কমিশনে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলে বা কোনো তথ্যের ভিত্তিতে বা অন্য কোনোভাবে ইসি নির্বাচন-পূর্ব অনিয়মের অভিযোগ পেলে তা যুগ্ম জেলা জজ ও সহকারী জজের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী তদন্ত কমিটিতে পাঠাতে পারে অথবা তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে।

ইসি ব্যবস্থা নেয়নি
ইসি এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ইসি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তারা ২০ টির মতো নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেয়েছে। কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কি না কিছুই জানানো হয়নি।

এর আগে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নিজেও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তখন ইসিকে পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইসির অধীনে এলেও তাদের ওপর কতটুকু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

আইন অনুসারে নির্বাচনে সম্পৃক্ত সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইসির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থেকে কাজ করবেন। যদি কেউ পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন বা ফল প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, ইসি তাকে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারে এবং নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন অনুসারে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ইসি বড় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আইনে ইসিকে অতুলনীয় ক্ষমতা দেওয়া আছে। দিনকে রাত, রাতকে দিন করা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসি সবই করতে পারে। তারা প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে, কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষমতার প্রয়োগ করেনি।

ইসিতে বিরোধ
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় ইসি কর্মকর্তাদের বদলি নিয়ে সিইসি নুরুল হুদা ও কমিশনার মাহবুব তালুকদারের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিল। এরপর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাংসদদের প্রচারের সুযোগ দেওয়া, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নুরুল হুদা ও মাহবুব তালুকদারের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়েও কমিশনে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে সিইসির সঙ্গে মাহবুব তালুকদারের মতবিরোধ প্রকট হয়ে ওঠে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে একটি ‘ক্রিটিক্যাল’ সময়ে সিইসি ও একজন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে বাদানুবাদ হওয়া উচিত ছিল না। কমিশনারদের মধ্যে বিরোধের কারণে ইসির ওপর মানুষের আস্থা কমে আসে।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :