দুর্যোগের পদধ্বনি শুনছে হাওর পাড়ের কৃষকরা

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  02:04 PM, 23 January 2019

২০১৭ সালের দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে এখনো সংগ্রাম করছে হাওর অঞ্চলের সাধারণ কৃষকরা। সেই হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে (পিআইসি) স্থান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার আসামিরা। ফলে আগামী ইরি-বোরো ফসল নিয়ে দুর্যোগের পদধ্বনি শুনছে সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লার হাওর পাড়ের সাধারণ কৃষকরা। হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের ভবিষ্যত নিয়ে তারা শঙ্কিত।

হাওর অঞ্চলে যে হাওরের বাঁধ যত শক্ত, সেই হাওরের ফসলের বাম্পার ফলনের নিশ্চয়তা তত বেশি। এ জন্য প্রতিবছরই হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ওপর সরকার জোর দিয়ে থাকে। এবারো চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি পিআইসি গঠন করা হয়।

তবে অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জে কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের এক মাস পরে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের জন্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল, সেই সব আসামিদের এবারের পিআইসিতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক নেতারা পিআইসি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য উপজেলা কমিটির হাতে তুলে দেন। উপজেলা কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদনের পর পিআইসির সভাপতি-সম্পাদকের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর পরপরই হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে দেখা দেয় শঙ্কা। অনেকেই পিআইসির সভাপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন। প্রতিদিনি লিখিত অভিযোগ পড়ছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।

শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউপি সদস্য আবুল মিয়া ৬৪ নং পিআইসির সভাপতি। তার পিআইসির বরাদ্দ ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকারও বেশি। আবুল মিয়া জানান, তিনি দুদকের আসামি ঠিকই, কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত নন। তার মতে, তিনি একা নন হবিবপুর ইউনিয়নের শিথিল মেম্বার, সুব্রত মেম্বার দুদকের আসামি হওয়া সত্ত্বেও কাজ পেয়েছে।

২০১৭ সালের ২১০ নং পিআইসির সভাপতি ছিলেন আটগাঁও ইউপি সদস্য বশর মিয়া। তার দাবি- তিনি দুদকের মামলার আসামি নন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলার ৭৫ নং আসামি তিনি।

দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের সদস্য প্রদীপ ভৌমিক দুদকের মামলার এজাহারের ৬৩ নং আসামি। মামলার আসামি হওয়ায় গত বছর তিনি কাজ পাননি। এবার দিরাই উপজেলার ৫২ নং পিআইসির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। এই পিআইসির বরাদ্দ ১৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

একই উপজেলার ১২নং পিআইসির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন তাড়ল ইউনিয়নের সদস্য লাল মিয়া। এই পিআইসির বরাদ্দ ২১ লাখ ২৪ হাজার ২৭৬ টাকা। ২০১৭ সালের মামলার এজাহারের ১১নং আসামি ছিলেন তিনি। তবে লাল মিয়া দাবি করেন- মামলাটি শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি এই মামলায় নেই।

জগদল ইউনিয়নের কলিয়ারকাপনের মিজানুর রহমান চৌধুরী ৮৬ নং পিআইসির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। তার প্রকল্পের বরাদ্দ ১৬ লাখ ১০ হাজার ৯ টাকা। তিনিও ২০১৭ সালের মামলার এজাহারের ১০ নং আসামি। ২০১৭ সালের ১৬৫ নং পিআইসির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ শতভাগ হওয়ার পরও দুদকের মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

এদিকে সাধারণ কৃষকদের শঙ্কা এবার বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম হলে ২০১৭ সালের মতো একই দুর্যোগে পড়তে হবে তাদের।

দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি শাল্লায় নুতন যোগদান করেছেন। অনেক বিষয়ে তার জানা নেই। উপজেলা কমিটির সমন্বয়ে পিআইসি হয়েছে। দুদকের আসামির বিষয়ে কেউ তাকে অবহিত করেনি।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-মুক্তাদির হোসেনেরও দাবি- দুদকের মামলার আসামির বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তবে ব্যবস্থা নেবেন।

‘হাওর বাঁচাও-সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ আন্দোলনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু জানান, যারা পিআইসির কাজ করে দুদকের আসামি হলো, তাদেরকেই আবার পিআইসির দায়িত্ব দেয়া হলো। যা দুঃখজনক। বিষয়টির ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা কাবিটা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, ‘পিআইসি গঠন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগটি আমাদের নজরে আসার পর দফায় দফায় বৈঠক করছি। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।’

উল্লেখ্য, গত সুনামগঞ্জ সফরে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। তিনি বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। উদ্বোধন হলেও এখনো বেশিরভাগ এলাকায় বাঁধের কাজ শুরু হয়নি।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :