রিভার ট্যুরিজম ফেস্ট ২০১৮

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  05:41 PM, 03 December 2018

প্রথমবারের মতো এই আয়োজন করেছিল ফেস্টিভ অ্যান্ড কালচারাল রিভার ট্যুরিজম কনসোর্টিয়াম (এফসিটিসি)।

চারশও বেশি যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাট থেকে চাঁদপুর এবং সেখান আবার ঢাকা, এই দীর্ঘ নৌভ্রমন ছিলো রিভার ট্যুরিজম ফেস্টের মুল আয়োজন।

‘ইনসাইটা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’, ‘ট্রাভেল মেট’, ‘ট্রাভেলারস হাব’, ‘ভ্রমণ বন্ধু’, ‘চক্কর’, ‘দুপা’- এই ছয়টি পর্যটন বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের মিলিত প্রয়াসে চলতি বছরের ৫ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে এফসিটিসি।

এই সংস্থার অন্যতম সদস্য মাসুদুল হাসান জায়েদী বলেন, “নদীমাতৃক বাংলাদেশের ভ্রমণ পিপাষুদের মাঝে নৌ-ভ্রমণ আরও জনপ্রিয় করে তোলা, দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোকে সুন্দর রাখার প্রতি ভ্রমণকারীদের সচেতন করে তোলা এবং পর্যটন খাতের বিভিন্ন অংশের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করাই এই সংস্থার লক্ষ্য।”

আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রতিবছর কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি এমন আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।

পরিকল্পনা ছিল সকাল আটটায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে লঞ্চ অভিজান পাঁচ, পৌছে যাবে দুপুর নাগাদ। সেখানে সামান্য সময় কাটিয়ে আবার রওনা দেওয়া হবে ঢাকার উদ্দেশ্যে, রাত আটটার মধ্যে সদরঘাট।
মাসুদুল হাসান জায়েদী লঞ্চের প্রবেশ পথে টিকিটের বান্ডিল নিয়ে বসে আছেন, অন্যান্যরাও সবাই পৌঁছেছে কিনা তা জানার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছিলেন এফসিটিসি’য়ের অন্যান্য সদস্য সাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া, জাহিদুর রহমান শাওন, আলি ফয়সাল দীপ, সাইফুর রহমান সজীব এবং এ.বি.এম ইব্রাহিম।

তবে সারা সপ্তাহ ঘড়ি ধরে অফিস করে কার মন চায় সময় বেঁধে বেড়াতে যেতে। তাই যাত্রা শুরু হয় ৯টা ৪২ মিনিটে।

চাঁদপুর বেড়ানো নয় বরং নৌভ্রমণটাই মুখ্য। তাই লঞ্চের গতি ছিল পার্কে বেড়াতে আসা যুগলদের মতোই আয়েশি। তিনতলা লঞ্চের প্রথমতলার একাংশে তখন চলছে সকালের নাস্তা বন্টন আর দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি। আরেক অংশে স্টল সাজাচ্ছেন এফসিটিসি-এর সদস্য স্ংস্থাগুলো। এই আয়োজন বাস্তবায়নে সহায়তাকারী আবাসিক হোটেল ও বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশ।

দোতলার একপাশে কেবিন আর আরেকপাশে চলছে আসন্ন সেমিনারের প্রস্ততি। তৃতীয় তলায় একপাশে কেবিন আর আরেক পাশে ছাদ।
এই উৎসবে অংশ নেওয়া ভ্রমণকারীদের সিংহভাগই এসেছেন পরিবার নিয়ে। তাই চারপাশের আমেজটা ছিল পারিবারিক নৌভ্রমণের মতো। বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষের মিলনমেলা তখন জমে উঠতে শুরু করেছে।

এই অবস্থায় ডাক এল সকালের নাস্তার। এবারে যাত্রীরা দলে দলে ভাগ হচ্ছেন, কোনো দলে চার-চাচাজান রাজনীতির আলাপ করছেন, কোথাও আবার মায়ের বয়সি মহিলারা সব দুশ্চিন্তা ভুলে কিশোরীদের মতো আড্ডায় মেতে উঠেছেন। নব-বিবাহিত যুগলরা রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে নদীর সৌন্দর্য আর জীবনের সৌন্দর্য মাপতে বিভোর। খিলখিল হাসি আর লুডুর চালের টক টক ভেসে আসছে নিচতলা থেকে।

দোতলার সেমিনারের প্রথম কাতারে বসে থাকা বিশেষ কিছু লোক ছাড়া বাকিদের বেশিরভাগই বক্তব্যের প্রতি উদাসীন। কথা হচ্ছিল বাংলাদেশে ভ্রমণ খাতে উন্নয়ন, নিরাপত্তা, সচেতনতা ইত্যাদি বিষয়ে। বিশেষ করে, ভ্রমণের সময় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা চলে এই সেমিনারে।

একসময় শুরু হয় শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আর তাদের বাবা মায়ের ওই মুহুর্তটাকে ক্যামেরাবন্দি করার হুল্লোড়। প্রতিযোগিতা শেষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের বিশেষ পুরষ্কার আর বাকিদের মাঝে সান্তনা পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
এভাবেই দুপুর হয়। লঞ্চের আয়েশি গতি তখন অনেককেই ভাবনায় ফেলেছে। কখন চাঁদপুর পৌঁছাবো, কখন ঢাকায় ফিরবো, কখন বাসায় যাব- এই হিসেব কষছেন গুরুজনরা। হিসেব শেষ হওয়ার আগেই ডাক এলো দুপুরের খাবারের।

খাবার পরিবেশন হচ্ছে নিচতলায়, তবে লাইনের শেষপ্রান্ত খুঁজতে উঠতে হচ্ছে দোতলায়। পরিবারের তাগড়া জোয়ানরা লাইনে দাঁড়িয়ে, আর বাকিরা চেয়ার যোগাড় করছেন। হিসেব এখন সবাই করছেন, তবে চাঁদপুর পৌঁছানোর নয়, খাবারের কাছে পৌঁছানোর। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে খাবার নিতে হলেও স্বাদ নিয়ে আপত্তি শোনা যায়নি কারও মুখেই।

খাওয়া শেষে আবার পুরানো হিসেবে ফিরতে হল, দূরত্ব আর সময়ের হিসাব। এবার হিসেব করছেন কর্তৃপক্ষ, ফলাফল হল নিরাপদ সময়ে ঘরে ফিরতে হলে চাঁদপুর আর যাওয়া চলবে না। তাই দুপুর সাড়ে তিনটা নাগাদ লঞ্চ উল্টো ঘুরলো, বরাবরের মতো আয়েশি গতিতেই ঢাকার পথ ধরলো।

তার কিছুক্ষণ পরেই তিনতলা থেকে বাদ্য বাজাতে বাজাতে বেরিয়ে এলেন জাহাঙ্গীর বাউল আর মিনা পাগলীর বাউল দল। কেবিন আর ছাদ ঘুরে দোতলার মঞ্চে আসন সাজিয়ে বসলেন, শুরু হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সন্ধ্যায় আবার হালকা নাস্তা ও চা পর্ব হলো। তবে এরপর মঞ্চে এল হাওয়াই মিঠাই, খাওয়ার হাওয়াই মিঠাই নয়, ব্যান্ড দল হাওয়াই মিঠাই। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তারাই মাতিয়ে রেখেছিলেন পুরো লঞ্চ।

আনুষ্ঠানিকতার শেষ পর্যায়ে ছিল র‌্যাফেল ড্র, ফানুশ ওড়ানো এবং আবার বাউল গান। রাত নয়টায় ঢাকার ঘাটে পৌঁছায় লঞ্চ। আর সেখানেই শেষ হয় রিভার ট্যুরিজম ফেস্ট ২০১৮।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন অনলাইন প্রতিনিধি। লাইফস্টাইল বিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :