ভোটের মাঠে আনুষ্ঠানিক প্রচার আজ শুরু

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  07:04 AM, 10 December 2018

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হচ্ছে আজ। গতকাল রবিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ফলে তিনশো আসনের সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আজই চূড়ান্ত বৈধ প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকলেও প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটতে পারবেন প্রার্থীরা। একইসঙ্গে পোষ্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল প্রচারণায় শোভা পাবে। প্রার্থীদের পদচারণায় নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে উঠবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটের ৪৮ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। তবে এবারের প্রচারণায় আচরণবিধি ভঙ্গের আশঙ্কা করছে খোদ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটগ্রহণের ২১দিন পূর্বে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয়নি।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছে, সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রচারণা শুরু হবে। কোন প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের জন্য মাঠে রয়েছেন ম্যাজিষ্ট্রেটরা।

এদিকে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কমিটি গঠন করার ১৪ দিনেও বরাদ্দ না পাওয়ায় পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ (ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে যুগ্ম জেলা জজ ও সহকারী জজদের সমন্বয়ে গত ২৫ নভেম্বর ১২২টি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়। প্রতিটি কমিটিকে তিনটি খাতে ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত নির্বাচনী তদন্ত কমিটির জন্য কোন অর্থ ছাড় হয়নি। সোমবার এই অর্থ ছাড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আইন অনুযায়ী, এই কমিটি কারও অভিযোগের ভিত্তিতে বা নিজ উদ্যোগে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে পারবে। তবে এই কমিটির কাউকে সরাসরি সাজা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তারা অভিযোগ তদন্ত করে তিনদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করবে। কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেন, তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এর আগের নির্বাচনে ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ সংশ্লিষ্ট এলাকায় গাড়িতে টহলে থাকত। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এই কাজটিও সেভাবে করা যাচ্ছে না।

প্রচারে সহিংসতার আশঙ্কাঃ

অতীতের নির্বাচনগুলোতে দেশের কোনো এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতা ঘটেছে এমন কোনো তথ্য ইসি কার্যালয়ে নেই। ইসির সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসি নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। যদিও এ পরিকল্পনা নেওয়া হয় ভোটের দিন ও ভোট-পরবর্তী দু’দিনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি মাথায় রেখে। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোট গ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগপর্যন্ত প্রচারের সময়ে ইসির কোনো নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সারাদেশে নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইসির অধীনে কাজ করছে। তাদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান কমিশনের অধীনে এর আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের সবক’টি উপনির্বাচন বিএনপি বর্জন করে এলেও স্থানীয় সরকারের ভোটগুলোতে তারা অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনগুলোতে বিরোধী দলের প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ছিল না বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে। এবারের নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এ জোটের নেতারা কমিশনের কাছে অসংখ্য অভিযোগ দায়ের করেছেন। এমনকি এসব অভিযোগের তালিকায় ইসি সচিবসহ মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের নামও এসেছে। কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অবশ্য বলেছেন, এ ধরনের ঢালাও অভিযোগে ইসির পক্ষে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে নিকট অতীতের সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে প্রশাসন যেমন আচরণ করেছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। তবে ওই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন না হলেও সংসদের ভোট নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধী জোট এ নির্বাচনে জয়ী হতে অনেক বেশি সক্রিয় হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসির নেওয়া পদক্ষেপে প্রার্থী ও ভোটারদের আস্থা মোটেই বাড়েনি। তাই প্রচারকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সহিংস আচরণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমীন মুরশীদ বলেন, শুরুতেই নির্বাচনী আচরণবিধির মৌলিক জায়গায় লঙ্ঘন হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই প্রচার শুরু হয়ে গেছে। সরকারি দলের অনেকে পদে থেকেও প্রচার চালিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের এটা আরও ভালোভাবে দেখা উচিত ছিল; কিন্তু তারা তা করেনি।

ইসি-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আচরণবিধি শুধু প্রচারেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া জড়িত। ভোটের মাঠে প্রশাসনের ভূমিকা, সরকারের আচরণ, সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের প্রচারে নামার সীমাবদ্ধতা, প্রার্থীদের আচরণ, দলগুলোর আচরণ, সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য- সবার ব্যাপারেই এ আচরণবিধি প্রযোজ্য। এ আইন লঙ্ঘনে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।

আচরণবিধিতে যা বলা আছেঃ

সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও তাদের সমমর্যাদাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না।

কোনো প্রার্থী তার এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না এবং এ-সংক্রান্ত কোনো সভায় যোগ দিতে পারবেন না। সরকারি রেস্টহাউস, ডাকবাংলো, সার্কিট হাউস কোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা যাবে না; সরকারি যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না এবং রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনসভা বা প্রচারসভা করা যাবে না। সভার জন্য লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং আগে যে আবেদন করবে, তাকে আগেই অনুমতি দিতে হবে। সভা করতে হলে ২৪ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে। কোনো প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ নির্বাচনের আগে ওই প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা ওই এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো চাঁদা বা অনুদান দেওয়া বা দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না।

কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অথবা সদস্য হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সভায় অংশ নিতে পারবেন না। কোনো দল বা কোনো প্রার্থী কোনো নির্বাচনী এলাকায় মাইক ব্যবহার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখবেন।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :