প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মজুরি বাড়ল পোশাক শ্রমিকদের

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:06 AM, 14 January 2019

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে। সরকারের ঘোষিত মজুরির কয়েকটি গ্রেডে যৌক্তিক হারে বেতন বৃদ্ধি করে গ্রেডগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেড নিয়ে শ্রমিকদের আপত্তি থাকলেও মোট ছয়টি গ্রেডে মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। স্বল্পতম সময়ে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে এবং ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।

এর পরেও যদি শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেয় সেক্ষেত্রে শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এদিকে সপ্তাহব্যাপী চলমান আন্দোলনে নিহত শ্রমিক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

গতকাল রবিবার বিকালে সচিবালয়য়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সম্মেলন কক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান গ্রেডগুলো সমন্বয়ের ঘোষণা দেন। এর আগে শ্রম মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে গ্রেডগুলো সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

সংশোধিত কাঠামো অনুসারে এক নম্বর গ্রেড মজুরি এখন থেকে হবে ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা। আগে এই গ্রেডে মজুরি ছিল ১৭ হাজার ৫১০ টাকা। দুই নম্বর গ্রেডে মজুরি হবে ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা। আগে এই গ্রেডে মজুরি ছিল ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা। তিন নম্বর গ্রেডে এখন থেকে মজুরি হবে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা। আগে এই গ্রেডে ছিল ৯ হাজার ৫৯০ টাকা। চার নম্বর গ্রেডে সংশোধিত কাঠামো অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি হবে ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা। আগে ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ২৪৫ টাকা। পাঁচ নম্বর গ্রেডে সংশোধিত কাঠামো অনুয়ায়ী মজুরি হবে ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা যা আগে ছিল ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা। ৬ষ্ঠ গ্রেডে নতুন মজুরি নির্ধারণ হয়েছে ৮ হাজার ৪২০ টাকা। আগে ছিল ৮ হাজার ৪০৫ টাকা। তবে ৭ম গ্রেডের মজুরি কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এই গ্রেডে ৮ হাজার টাকা রাখা হয়।

বৈঠক শেষে নতুন মজুরি কাঠামো অনুমোদন করে তাতে শ্রমিক নেতারা স্বাক্ষর করেন বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। বৈঠক শেষে মালিকদের পক্ষে বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিনে আন্দোলনের নামে যারা পোশাক কারখানা ভাঙচুর করেছে তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সম্পদ রক্ষায় সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে। সরকার যেন কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়। এসময় শ্রমিকদের অনতিবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পোশাক শ্রমিকরা জানুয়ারি মাসের বেতন নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে পাবেন। নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে ডিসেম্বর মাসে যে পরিমাণ টাকা কম পেয়েছেন, তাও জানুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, যারা ভাঙচুর করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই কয়দিনে যে ক্ষতি হয়েছে, পোশাক শ্রমিক সবাই উদ্যোগী হয়ে কাজ করে যেন সেটুকু পুষিয়ে দেন। মন্ত্রী বলেন, সরকারি নিয়ম অনুসারে নিহত শ্রমিকের পরিবার যে ক্ষতিপূরণ পাবেন তার সঙ্গে আমি আরও ১ লাখ টাকা দেবো। শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন। তিনি বলেন, সোমবার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। মজুরি কাঠামো নিয়ে যে অসামঞ্জস্য ছিল, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা সমাধান হয়েছে। যে মজুরি ঘোষণা হলো, শুধু মেনে নেওয়া নয়, আমরা স্বাগত জানাই। ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে আমরা আন্দোলন করব। তবে সেই আন্দোলন ধ্বংসাত্মক করা যাবে না। আন্দোলন মানে রাস্তা অবরোধ নয়, কারখানা ভাঙচুর নয়। মালিককে অবরুদ্ধ করা নয়। এই কয়দিনের আন্দোলনের নামে যারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন, তবে কোনোভাবেই কোনো নিরপরাধ শ্রমিক যেন এর শিকার না হয়।

উল্লেখ্য, বেতন কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ এনে পোশাক শ্রমিকদের এক সপ্তাহ ধরে চলা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সমাধানে মজুরি সমন্বয়ের জন্য শনিবার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শ্রমিকদের স্বার্থে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের পাশাপাশি ১ ও ২ নম্বর গ্রেডের মজুরি সমন্বয়ের নির্দেশ দেন।

কাজে না ফিরলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে: বিজিএমইএ সভাপতি

আজ সোমবার থেকে যেসব শ্রমিক কারখানায় ফিরবেন না তাদের কোনো মজুরি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। শ্রমিকরা কাজে ফিরে না গেলে পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। গতকাল রবিবার পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনার কর্মস্থলে ফিরে যান। উত্পাদন কাজে অংশগ্রহণ করুন। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা আগামীকাল (সোমবার) থেকে কাজ শুরু না করলে শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা মোতাবেক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। শ্রমিকদের মজুরি বোর্ডে বৈষম্য আছে বলে তাদের আন্দোলনে নামিয়েছে একটি কুচক্রী মহল। পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একটি মহল চক্রান্ত করছে। বৈষম্যের কথা বলে শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে, কর্মবিরতি করতে প্ররোচিত করা হচ্ছে। আমরা একাধিকবার শ্রমিকদের অনুরোধ করেছি কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা কাজে ফেরেনি। নতুন বেতন কাঠামোয় বৈষম্য আছে এই উসকানি দিয়ে পোশাক খাতের শ্রমিকদের অশান্ত করা হচ্ছে। পোশাক শিল্প খাতকে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’ এ সময় সরকারের কাছে ব্যবসায়ী মালিকদের জান ও মালের নিরাপাত্তা চান বিজিএমইএ সভাপতি। বিজিএমইএ’র সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, আতিকুল ইসলাম।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :