জমজমাট নির্বাচনী ব্যবসা-বাণিজ্য

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  06:58 AM, 10 December 2018

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যবসা। নির্বাচন কমিশন আজ প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পরপরই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করবেন। কিন্তু এরই মধ্যে দেশের সর্বত্র এমপি প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বেড়েছে নগদ টাকার লেনদেন। যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয়সহ সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ছাপাখানা- সর্বত্রই এখন নির্বাচনী আমেজ।

সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততা ছাপাখানাগুলোতে। রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকার রনি প্রোডাক্টসের মালিক গোলাম সারওয়ার বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, পোস্টার তৈরির অর্ডার তত আসতে শুরু করেছে। বেশির ভাগই আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। দলীয় মনোনয়নপত্র নেয়ার আগে এক দফা পোস্টার বানিয়ে নিয়ে গেছেন নেতাকর্মীরা। ১০ ডিসেম্বর (আজ) প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর নতুন করে পোস্টার অর্ডার পাওয়া যাবে। তবে যেসব নেতার মনোনয়ন নিশ্চিত এবং যারা এরই মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন, তারা অর্ডার দিয়েছেন এবং অনেকের পোস্টার ছাপাও হয়ে গেছে।

আর দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তো সর্বক্ষণই সরগরম। এর প্রভাব পড়েছে আশপাশের দোকানগুলোতে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রয়েছে কমপক্ষে ১২টি চা-বিস্কুটের দোকান। প্রতিটি দোকানেই ভিড়। বিক্রেতারা চা সরবরাহ করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। তারা জানান, আগে সারা দিনে ১৫০-২০০ কাপ চা বিক্রি হতো, এখন ৫০০-৬০০ কাপ চা বিক্রি হচ্ছে। ফলে তাদের চিনি, চা পাতা এবং দুধ বেশি করে কিনতে হচ্ছে। সেখানকার চা বিক্রেতা আবদুল করিম জানান, এখন অনেক রাত পর্যন্ত সরগরম থাকছে পার্টি অফিস। ফলে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভিড় লেগেই আছে। বেড়েছে সাধারণ মানুষের আনাগোনাও। সবমিলে ভালোই বিক্রি হচ্ছে।

একই অবস্থা নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায়ও। কাকরাইলের চা বিক্রেতা জহুরুল হক বলেন, আগে যেখানে প্রতিদিন ১০০ কাপ চা বিক্রি হতো, এখন সেখানে প্রায় ৩০০ কাপ চা বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই চা বিক্রি বেড়ে যাবে।

শুধু রাজধানীই নয়, নির্বাচনী প্রভাবে দেশের সর্বত্রই জমে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ঢাকা-১ আসনের দোহার উপজেলার মেঘুলা গ্রাম। মূল সড়কের পাশেই ছোট গ্রাম্যবাজার। চা দোকানি একরামুল হক খোকনের পুরো পরিবারের চলে এ দোকানের আয়ে। তিনি বলেন, নির্বাচন আসায় বিক্রি অনেক বেড়েছে। আগে দৈনিক ১০০ কাপ চা বিক্রি হতো, এখন প্রায় ৫০০ কাপ বিক্রি হচ্ছে। সকাল থেকেই শুরু হয় মানুষের ভিড়। সন্ধ্যায় ভিড় আরও বেড়ে যায়, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। ফলে শুধু চা নয়, বিক্রি বেড়েছে বিস্কুট, রুটিসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যেরও। একই উপজেলার নারিশা গ্রামে পদ্মা নদীঘেঁষা গ্রাম্যবাজারের পিঠা বিক্রেতা তাছলিমা বেগম। মাটির চুলায় চিতই পিঠার খোলায় চালের গুঁড়ি ঢালতে ঢালতে তিনি বলেন, একে তো শীত, তার মধ্যে নির্বাচনের বাতাস। যখনই সময় পান নেতাকর্মীরা চলে আসেন বাজারে। তিনি হাসতে হাসতে বলেন, খোলা থেকে গরম গরম চিতই পিঠা উঠাতেই তা বিক্রি হয়ে যায়।

শুধু চা, পিঠার বিক্রি বেশি কিংবা ছাপাখানার ব্যস্ততা বেড়েছে, তা-ই নয়। বিক্রি বেড়েছে শীতের পোশাকেরও। এছাড়া নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শেষে তেহারি, বিরিয়ানি অথবা খিচুরির আয়োজন করা হচ্ছে নির্বাচনী এলাকায়। তাই সারা দেশে চাল, ডাল, মুরগি ও গরুর মাংসের বিক্রিও বেড়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাংস ব্যবসায়ী জলিল বেপারি বলেন, নির্বাচনী আমেজে খিচুরি ও তেহারি তৈরির জন্য চাল, বিভিন্ন ধরনের ডাল, মুরগি ও গরুর মংসের বিক্রি বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নির্বাচনের কারণে অনেক ধরনের ব্যবসা ভালো যাবে। বিশেষ করে এ সময় বেশকিছু জিনিসের কদর বাড়বে। নির্বাচন ঘিরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও জমিয়ে ব্যবসা করবে। দেশজুড়ে নগদ টাকার লেনদেন হবে। এতে সারা দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে বড় আকারে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে, যা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সাম্প্রতিক এক বক্তবেও বিষয়টি উঠে আসে। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। এ সময় চাপান করার হার বেড়ে যাওয়ায় চিনির চাহিদার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু এতে সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে তেমন খারাপ প্রভাব পড়বে না।

এদিকে নির্বাচনী প্রভাবে জমে উঠেছে রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লীর বিক্রি। কেরানীগঞ্জের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ শেখ কাওসার বলেন, সারা দেশে নির্বাচনী আমেজ লেগেছে। শহরে শীত না পড়লেও গ্রামাঞ্চলে পড়েছে। তাই নেতাকর্মীদের সবসময় ঘরের বাইরে সময় দিতে হচ্ছে। যার কারণে গ্রামাঞ্চলে শীতের কাপড়ের কদর বেড়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুচরা বিক্রেতারা এখানকার পাইকারি দোকানগুলোয় ভিড় করছেন। তাই নির্বাচনী আমেজে বিক্রিও বেড়েছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা শীতের পোশাক তৈরি করে পাইকারি দোকানগুলোয় সাজিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এবার শীত মৌসুমে কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লীতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় বিক্রি আরও বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :