জেএসসি-জেডিসির ফলাফলে আপত্তি লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর

  প্রকাশিত হয়েছেঃ  10:45 AM, 14 January 2019

প্রত্যাশিত ফল করতে না পারা লক্ষাধিক জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছে। ফল নিয়ে অসন্তুষ্ট এসব শিক্ষার্থীর বেশির ভাগ আবেদন করেছেন গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে। তবে ধর্ম এবং বাংলা বিষয়েও আবেদনকারী কম নয়। মূলত জিপিএ-৫ ও গোল্ডন জিপিএ-৫ বঞ্চিত হয়েই আবেদন করেছেন বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী।

২০১৮ শিক্ষাবর্ষে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় মোট ২২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। এ বছর গড় পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৮ হাজার ৯৫ জন। ২০১৭ সালে পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে পাসের হার ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, চতুর্থ বিষয়ের নম্বর এবার যোগ হয়নি। কিছু বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নে চলে গেছে স্কুলপর্যায়ে। ফলে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কমেছে। এ কারণে পুনঃনিরীক্ষার আবেদনকারীও বেশি। তবে কিছু ক্ষেত্রে নম্বর প্রদানেও সমস্যা থাকতে পারে। তবে সেটা পুনঃমূল্যায়নে বেরিয়ে আসবে।

২০১৮ সালের জেএসসি-জেডিসি’র বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের দুটি পত্রকে একত্রিত করে পরীক্ষা নেয়া হয়। এ কারণে বাংলা ২য় পত্র ও ইংরেজি ২য় পত্র বিষয়ের আলাদাভাবে পরীক্ষা হয়নি। এ কারণে নম্বর পাওয়ার প্রবণতা প্রভাব পড়েছে। তবে প্রায় সব বোর্ডে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞানে বেশি পুনঃনিরীক্ষণে আবেদন এসেছে।

এদিকে এবার ইংরেজি ভার্সনেও পুনঃনিরীক্ষার আবেদন তুলনামূলক বেশি পড়েছে। ঢাকা বোর্ড সূত্র জানায়, ইংরেজি ভার্সনে কেবল ধর্ম বিষয়েই রেকর্ড তিন হাজার আবেদন পড়েছে। এভাবে অন্যান্য বিষয়েও আবেদনকারী অনেক।

সূত্র জানায়, জেএসসিতে পুনরায় মূল্যায়নে ঢাকা বোর্ডে ৩৬ হাজার ২১৬ জন আবেদন করেছেন। তার মধ্যে ৫৬ হাজার ৩২১টি উত্তরপত্র রয়েছে। ইংরেজি বিষয়ে আবেদন ১৫ হাজার ৬৫৪টি, গণিত বিষয়ে ১২ হাজার ৩৩১টি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ১০ হাজার ৫০২টি আবেদন জমা হয়েছে।

কুমিল্লা বোর্ডে ৯ হাজার ৮৫৩ পরীক্ষার্থী ১২ হাজার ৮৫৩টি আবেদন করেছে। এর মধ্যে ইংরেজিতে ২ হাজার ৯০৪টি ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচিতিতে ২ হাজার ৫৬০টি ও গণিতে ২ হাজার ৩৫৫টি।

যশোর বোর্ডে ৭ হাজার ১২০ আবেদনকারী ১০ হাজার ৫৬৩ বিষয়ে আবেদন করেছে। এ বোর্ডে গণিতে ৩ হাজার ৬৫৯টি, ইংরেজি বিষয়ে ২ হাজার ৭৫০ ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচিতিতে ২ হাজার ৩২০টি আবেদন জমা পড়েছে।

চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮ হাজার ৪০৮ পরীক্ষার্থী ১২ হাজার ৪০৮টি বিষয়ে আবেদন করেছে। এর মধ্যে গণিতে তিন হাজার ৬৩০টি, ইংরেজিতে ২ হাজার ৫৫০টি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ২ হাজার ১২০টি আবেদন রয়েছে।

সিলেট বোর্ডে ৬ হাজার ৭৫০ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছে। এ বোর্ডেও গণিতে ও ইংরেজি বিষয়ে সর্বোচ্চ আবেদন। এ সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের বেশি।

বরিশাল বোর্ডে তিন হাজার ২ হাজার ৫০১ পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৪৬৫টি আবেদন করেছে। এর মধ্যে বাংলা বিষয়ে ৭৪৯টি, সাধারণ বিজ্ঞানে ৬৭০ ও গণিতে ৫৩৭টি আবেদন রয়েছে।

রাজশাহী বোর্ডে ৭ হাজার ৯৪৩ বিষয়ে অভিযোগ জমা হয়েছে। তবে এ বোর্ডের উত্তরপত্রের সংখ্যা জানা যায়নি। তার মধ্যে গণিত বিষয়ে ২ হাজার ৮৩৭টি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচিতি বিষয়ে ১ হাজার ১৩৫টি ও সাধারণ বিজ্ঞানে ১ হাজার ১৬টি আবেদন রয়েছে।

দিনাজপুর বোর্ডে ছয় হাজার ২৭১ জন পরীক্ষার্থী ১০ হাজার ৪২৩টিতে আবেদন করেছে। তার মধ্যে ইংরেজি বিষয়ে ৩ হাজার ৭৩টি, বিজ্ঞানে ২ হাজার ৩১২টি ও গণিতে ১ হাজার ৭৯৬টি আবেদন রয়েছে। সাধারণ আট বোর্ডে সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ করা আবেদনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৬২টিতে।

অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের অধীন জেডিসিতে ৮ হাজার ৮৭০ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছে। এ বোর্ডে গণিত ও আরবি বিষয়ে আবেদনের সংখ্যা বেশি। তবে অন্য বোর্ডগুলোতে সব মিলিয়ে এক লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৭টি আবেদন জমা হয়েছে। সব ক’টি বোর্ড মিলে মোট ৯৩ হাজার ৮৩২টি আবেদন জমা হয়েছে বলে জানা গেছে।

তপন কুমার সরকার বলেন, প্রথা অনুযায়ী ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশিত হয়। সে অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হবে।

বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানান, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত চারটি বিষয় দেখা হয়। এগুলো হল- উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়।

বোর্ড কর্মকর্তারা বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র পুনরায় মূল্যায়ন হয় না। পুনঃনিরীক্ষণে যেসব ফল পরিবর্তন হয় তা মূলত পরীক্ষকদের ভুলের কারণে। দেখা গেছে, একজন পরীক্ষার্থী ৮৭ নম্বর পেয়েছে সেটাকে পরীক্ষক ওএমআর শিটে ৭৮ পূরণ করেছে। ফলে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ বঞ্চিত হয়। তবে পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের অনেক উদাসীনতা রয়েছে। অনেক পরীক্ষক রয়েছে নিজেরা উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করে অন্যদের দিয়ে মূল্যায়ন করান।

২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের দুই প্রধান পরীক্ষকের ভুলের কারণে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে এক হাজার ১৪১ জন ফেল করে। নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় দুই প্রধান পরীক্ষক ‘খ’ ও ‘গ’ সেট গুলিয়ে ফেলেন। তারা ‘খ’ সেট প্রশ্নের মূল্যায়ন করেন ‘গ’ সেটের উত্তরপত্রের মাধ্যমে আর ‘গ’ সেটের মূল্যায়ন করেন ‘খ’ সেটের উত্তরপত্রের মাধ্যমে। ফলে ‘খ’ সেটে যারা পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাদের উত্তরের সঙ্গে প্রধান পরীক্ষকের ভুল উত্তরমালার সমন্বয় হয়নি। ওই ঘটনায় হৃদয় ঘোষ নামে এক ছাত্র আত্মহত্যা করে।

এ অবস্থায় পরীক্ষকদের ভুলের শাস্তি অবশ্য দৃষ্টান্তমূলক কমই। হৃদয় ঘোষের ঘটনায় দুই পরীক্ষকের এমপিও স্থগিত হয়। কিন্তু তা ছাড় করার প্রক্রিয়া চলছে বর্তমানে।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ডিসেম্বর জেএসসি ও জেডিসির ফলাফল প্রকাশিত হয়। উভয় পরীক্ষার ফলাফলের পাসের হার কিছুটা বাড়লেও সবগুলো সূচকেই গতবারের তুলনায় খারাপ হয়েছে।

প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :