ছায়ানটের বর্ষবরণ : অনাচারের বিরুদ্ধে শুভবোধ জাগরণের আহ্বান
রাজধানীর রমনা বটমূলের ঐতিহ্যবাহী ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান থেকে সামাজিক সব অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার মানস নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬-কে স্বাগত জানানো হয়েছে।
রবিবার (১৪ এপ্রিল) প্রতিবছরের মতো রমনার বটমূলে ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’ আহ্বান নিয়ে সাজানো হয় ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন।
রমনার বটমূলে বাংলাদেশের অন্যতম সংস্কৃতিক সংগঠন- ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন প্রায় একশ শিক্ষার্থী-প্রাক্তনী-শিক্ষক এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একক, সম্মেলক গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। পরিবেশন করা হয়- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, লালন শাহ, মুকুন্দ দাস, অজয় ভট্টাচার্য, শাহ্ আবদুল করিম, কুটি মনসুর, সলিল চৌধুরীর গান। ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুনের বক্তব্যের শেষে জাতীয় সংগীত দিয়ে শেষ হয় ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজন।
এ ছাড়া বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ-১৪২৬ উদযাপনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছে। ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’–এমন কল্যাণ প্রার্থনা দিয়েই জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করেছে বাঙালি জাতি। পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতেছে সারা দেশ। চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৫ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬।
মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে শুরু হয় বাংলা সন গণনা। কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য এই কাজ করা হতো। হিজরি চন্দ্রাসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।
প্রথমদিকে বাংলা সনের পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে ১৫৫৬ সালে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।
দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।